কোভিড-১৯ চিকিৎসায় আশাব্যঞ্জক আইভারমেকটিন: আইসিডিডিআর,বি।


নভেল করোনাভাইরাস আক্রান্তদের চিকিৎসায় অ্যান্টি-প্যারাসাইটিক ওষুধ আইভারমেকটিন প্রয়োগ করে আশাব্যঞ্জক ফল পাওয়ার কথা জানিয়েছে আইইসিডিডিআর,বি।

মৃদু কোভিড-১৯ সংক্রমণযুক্ত হাসপাতালে ভর্তি রোগীদের আইভারমেকটিন প্রয়োগের পর আরটিপিসিআর টেস্টে তারা কোভিড-১৯ নেগেটিভ হয়েছেন বলে সোমবার এক সেমিনারে জানানো হয়।

তবে আইসিডিডিআরবি বলছে, এটা ছোট আকারের গবেষণার ফল। বিস্তৃত পরিসরে ব্যবহার নিয়ে ব্যাপক গবেষণা প্রয়োজন।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক এবং ট্রিটমেন্ট প্রটোকল কমিটির সদস্য সচিব ডা. আহমেদুল কবীর বলেন, “এই মুহূর্তে কোভিড-১৯ আক্রান্তদের চিকিৎসায় ব্যবহার করা যাবে না এটা। ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের জন্য ন্যাশনাল গাইডলাইনে যুক্ত করা যেতে পারে।”

সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন আইসিডিডিআরবির জ্যেষ্ঠ বিজ্ঞানী ডা. ওয়াসিফ আহমেদ খান।

১৭ জুন থেকে ১৮ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত রাজধানীর কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং মুগদা জেনারেল হাসপাতালে এই গবেষণা চালায় আইসিডিডিআরবি।


গবেষণার আওতায় ৬৮ জন রোগীর মধ্যে ২২ জনকে পাঁচদিন দৈনিক ১২ গ্রাম করে শুধুমাত্র মুখে খাওয়ার আইভারমেকটিন, ২৩ জনকে এক ডোজের আইভারমেকটিনের সঙ্গে ডক্সিসাইক্লিন (২০০ মিলি গ্রাম প্রথমদিন এবং পরবর্তীতে ১০০ মিলি গ্রাম দিনে দুইবার ৪দিন) এবং ২৩ জনকে প্লাসিবো দেওয়া হয়।

গবেষণার ফলাফল জানাতে গিয়ে আইসিডিডিআরবি জানিয়েছে, ১৪ দিনের মধ্যে শুধুমাত্র আইভারমেকটিন নেওয়া ৭৭ শতাংশ কোভিড-১৯ জীবানুমুক্ত হয়েছেন, অর্থাৎ আরটিপিসিআর টেস্টে তারা কোভিড-১৯ মুক্ত প্রমাণিত হয়েছেন।

আইভারমেকটিন এবং ডক্সিসাইক্লিন প্রয়োগ করা ৬১ শতাংশ এবং প্লাসিবো পাওয়া ৩০ শতাংশ রোগী করোনাভাইরাসমুক্ত হয়েছেন।

গবেষণা প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে বলা হয়েছে, ওষুধ প্রয়োগের তৃতীয় দিনে শুধুমাত্র আইভারমেকটিন দেওয়া হয়েছে এমন ১৮ শতাংশ, আইভারমেকটিন এবং ডক্সিসাইক্লিন দেওয়া হয়েছে এমন ৩ শতাংশ এবং প্লাসিবো দেওয়া ৩ শতাংশ রোগী ভাইরাসমুক্ত হয়েছেন। সপ্তম দিনে এই ফল ছিল ৫০ শতাংশ, ৩০ শতাংশ এবং ১৩ শতাংশ।

গত ২ ডিসেম্বর ইন্টারন্যাশনাল জার্নাল অব ইনফেকশাস ডিজিজেস, আইজেআইডিতে প্রকাশিত হয়েছে বলে জানিয়েছে আইসিডিডিআরবি।

সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাজমুল হাসান এমপি।


তিনি বলেন, “আইভারমেকটিনের ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে সহায়তা করতে পেরে আমরা আনন্দিত। এটি কোভিড-১৯ মহামারীর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ব্যয় সাশ্রয়ী সমাধান খুজে বের করার একটি প্রয়াস। এই গবেষণার সম্ভাবনাময় ফলাফলে আমরা আনন্দিত এবং এটি সত্যিকার অর্থেই কোভিড-১৯ এর বিরুদ্ধে আমাদের লড়াইয়ে আরও বেশি শক্তি যোগাবে এবং অনেক অকালমৃত্যু এড়াতে সাহায্য করবে।“

অনুষ্ঠানে আইসিডিডিআরবি-র ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী পরিচালক ও নিউট্রিশন এন্ড ক্লিনিক্যাল সার্ভিসেস বিভাগের সিনিয়র ডিরেক্টর ড. তাহমিদ আহমেদ।

তিনি বলেন, বাংলাদেশের মতো নিম্ন ও মাঝারি আয়ের দেশসমূহে এই মহামারীর মোকাবিলায় একটি সাশ্রয়ী ও সহজে ব্যবহারযোগ্য চিকিৎসা ব্যবস্থা খুঁজে বের করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

“কোভিড-১৯ এর চিকিৎসা পদ্ধতি সম্পর্কে সিদ্ধান্ত গ্রহণকারীদেরকে সাহায্য করার উদ্দেশ্যে শুধু আইভারমেকটিন ব্যবহার করে আরও বড় মাপের একটি ট্রায়াল করার জন্য আমরা সহায়তা সন্ধান করছি।”

এই গবেষণায় সহায়তা করায় বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর, বাংলাদেশ মেডিকেল রিসার্চ কাউন্সিল এবং গবেষণায় অংশ নেওয়া হাসপাতালগুলোর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান।

অনুষ্ঠানে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা.জামিল আহমেদ, বাংলাদেশ মেডিকেলের ডা. তারেক আহমেদ, ওষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের পরিচালক আইয়ুব খান, বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালসের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা রাব্বুর রেজা উপস্থিত ছিলেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *