ট্রাম্পকে নিয়ে সময় নষ্ট করতে ইচ্ছুক নন বাইডেন

সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে নিয়ে সময় নষ্ট করতে ইচ্ছুক নন বর্তমান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। তাই তিনি সিনেটে ট্রাম্পের অভিশংসন দণ্ডের কার্যক্রম সংক্ষিপ্ত করতে নিজ দলের আইনপ্রণেতাদের নির্দেশনা দিয়েছেন।

ফেব্রুয়ারির দ্বিতীয় সপ্তাহে সিনেটে ট্রাম্পের অভিশংসন দণ্ডের কার্যক্রম শুরু হওয়ার কথা। তবে সিনেটে ট্রাম্পের অভিশংসন দণ্ডের ফলাফল সম্পর্কে ইতিমধ্যে একটা পরিষ্কার ধারণা পাওয়া গেছে।

প্রেসিডেন্ট বাইডেন নিজেও জানেন, ট্রাম্পের অভিশংসন দণ্ড কার্যকরে সিনেটে রিপাবলিকান পার্টির ১৭ জন সদস্যের সমর্থন পাওয়া যাবে না। ফলে, এ নিয়ে সময় নষ্ট না করে তিনি নিজের কর্মসূচিগুলো এগিয়ে নিয়ে যাওয়াকেই গুরুত্ব দিচ্ছেন।

বাইডেন প্রশাসনের কর্মকর্তা ও ঘনিষ্ঠজনদের বরাত দিয়ে প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যম দ্য হিল ডটকম এ নিয়ে ৩০ জানুয়ারি একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, বাইডেনসহ ডেমোক্র্যাট নীতিনির্ধারকেরা আগে থেকেই জানেন, সিনেটে ট্রাম্পের অভিশংসন নিয়ে কী ঘটতে পারে।

প্রতিনিধি পরিষদে ১০ জন রিপাবলিকান ট্রাম্পের অভিশংসনের পক্ষে ভোট দেন। কিন্তু সিনেটে তাঁর অভিশংসন দণ্ড কার্যকরের জন্য প্রয়োজনীয়সংখ্যক রিপাবলিকানের এগিয়ে আসার কোনো লক্ষণ নেই।বিজ্ঞাপন

সিনেটে অভিশংসন আদালতে ট্রাম্পকে দায়ী করে যত যুক্তি বা প্রমাণই উপস্থাপন করা হোক না কেন, তাতে রিপাবলিকানদের অবস্থানের খুব একটা পরিবর্তন ঘটবে বলে মনে হয় না।

অনেক মধ্যপন্থী রিপাবলিকান সিনেটর ট্রাম্পের শেষ সময়ের কার্যক্রমের সমালোচনা করে বক্তব্য রেখেছেন বটে; কিন্তু সিনেটে এখন পর্যন্ত মাত্র পাঁচজন রিপাবলিকান সিনেটরকে ট্রাম্পের বিপক্ষে অবস্থান নিতে দেখা গেছে। সিনেটে ট্রাম্পের অভিশংসন দণ্ড কার্যকরে আরও অন্তত এক ডজন রিপাবলিকানের সমর্থন দরকার।

সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় বাইডেন সিনেটে ট্রাম্পের অভিশংসন আদালতের কার্যক্রম দ্রুত শেষ হওয়ার পক্ষে। এ জন্য তিনি নিজ দলের সিনেটরদের নির্দেশনা দিয়েছেন।

করোনা মহামারি মোকাবিলা, টিকা সরবরাহ নিশ্চিত করাসহ নাগরিকদের জন্য ঘোষিত প্রণোদনা প্রস্তাব কংগ্রেসে পাস করানোই এখন বাইডেনের অগ্রাধিকার।

বাইডেনঘোষিত ১ দশমিক ৯ ট্রিলিয়ন ডলারের নাগরিক প্রণোদনা নিয়ে আমেরিকার জনগণের মধ্যে ব্যাপক আগ্রহ সৃষ্টি হয়েছে। জনগণের কাছে সরাসরি ১ হাজার ৪০০ ডলার পাঠানো, কর্মহীনদের ভাতা দেওয়ার মেয়াদ বাড়ানো, বাড়িভাড়া দিতে না পারা লোকজনকে সাহায্য, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের সহযোগিতার জন্য ঘোষিত প্রণোদনা নিয়ে বেশি অপেক্ষার সময় নেই বাইডেনের হাতে।

এসব নিয়ে সমঝোতার জন্য রিপাবলিকান আইনপ্রণেতাদের সঙ্গে আলোচনা চলছে। প্রতিনিধি পরিষদে ডেমোক্র্যাট দলের সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকলেও এ ধরনের আইন পাসের জন্য সিনেটে দুই–তৃতীয়াংশের সমর্থনের প্রয়োজন। এখন পর্যন্ত একজন রিপাবলিকানও বলেননি যে বাইডেনের প্রণোদনা প্যাকজের পক্ষে তাঁরা ভোট প্রদান করবেন।

রিপাবলিকান সিনেটর মিট রমনি বলেই ফেলেছেন, এমন উদার প্রণোদনা প্রস্তাবে একজন রিপাবলিকান আইনপ্রণেতাও ভোট দেবেন বলে তিনি মনে করেন না।
রিপাবলিকানদের পক্ষ থেকে প্রতিনিধি পরিষদ ও সিনেটে এই প্রণোদনা প্রস্তাব নিয়ে শুরুতেই ব্যাপক বিরোধিতার মুখে পড়বেন বাইডেন।

সমঝোতা না হলেও প্রেসিডেন্ট বাইডেন তাঁর প্রস্তাবিত প্রণোদনা প্যাকেজ নিয়ে এগিয়ে যাওয়ার কথা বলেছেন।

হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি জেন সাকি বলেছেন, অর্থনৈতিকভাবে বিপর্যস্ত আমেরিকার লোকজনকে সাহায্য করার জন্য কংগ্রেসে সপ্তাহের পর সপ্তাহ বা মাসের পর মাস বিতর্ক হোক—এমনটা তাঁরা চান না।

ভিন্ন প্রয়াস নিয়ে প্রেসিডেন্ট বাইডেন দ্রুতই জনগণের কাছে প্রস্তাবিত প্রণোদনা পৌঁছে দেবেন বলে প্রেস সেক্রেটারি জানিয়েছেন। এ ক্ষেত্রে কংগ্রেসের ‘রিকনসিলিয়েশন’ পদ্ধতি নামের বিশেষ আইনপ্রণয়ন প্রক্রিয়ার আশ্রয় নেওয়া হতে পারে।

‘রিকনসিলিয়েশন’ পদ্ধতিতে সাধারণ সংখ্যাগরিষ্ঠতায় আইন প্রস্তাব পাস করার সুযোগ রয়েছে। সমস্যা হচ্ছে মার্কিন কংগ্রেসের কার্যবিধিতে এমন পদ্ধতিতে কোনো বিষয়ে বছরে একটির বেশি আইন পাস করার সুযোগ নেই।

বছরের শুরুতেই বাইডেন প্রস্তাবিত প্রণোদনা আইন পাস করার জন্য ‘রিকনসিলিয়েশন’ পদ্ধতি গ্রহণ অবশ্যম্ভাবী হয়ে উঠেছে বলে মনে করা হচ্ছে। বাইডেন নিজেও সাংবাদিকদের এমন ইঙ্গিত দিয়েছেন।

বাইডেনের জন্য তাঁর নিয়োগ দেওয়া প্রশাসনিক ও সাংবিধানিক গুরুত্বপূর্ণ পদের লোকজনের অনুমোদন নিশ্চিত করাও একটি জরুরি কাজ। নতুন প্রশাসনের সব কর্মকর্তা নিশ্চিত হয়ে কাজকর্ম শুরু না করলে বাইডেন প্রশাসনের নীতিমালা স্পষ্ট হয়ে উঠবে না। অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক বিষয়ে ট্রাম্পের সময় থেকে ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য পূর্ণ প্রস্তুতি নিয়ে কাজ শুরুর ওপর গুরুত্ব দিচ্ছেন বাইডেন।

এই সময়ে ট্রাম্পের অভিশংসন দণ্ড নিয়ে দীর্ঘ বিতর্ক হোক এবং শেষ পর্যন্ত শূন্য ফলাফল প্রাপ্তির মধ্যে প্রেসিডেন্ট বাইডেন কোনো সাফল্য দেখছেন না।

ট্রাম্পের অভিশংসন দণ্ড কার্যকরের আগাম ফলাফল টের পাওয়ায় প্রেসিডেন্ট বাইডেন রিপাবলিকানদের সঙ্গে তাঁর সম্পর্কের প্রকাশ্য অবনতি চান না। শপথ গ্রহণের পর তিনি যে ঐক্যের ডাক দিয়েছিলেন, সেই ঐক্যর পথে যত দূর যাওয়া সম্ভব, তত দূর যেতে ইচ্ছুক বাইডেন।

প্রতিনিধি পরিষদে ট্রাম্পের অভিশংসন প্রস্তাব গৃহীত হওয়ার পর বেশ কিছু ডেমোক্র্যাট চাইছিলেন, বাইডেন প্রশাসনের প্রথম ১০০ দিন চলে যাওয়ার পরই অভিশংসন প্রস্তাবটি পরবর্তী প্রক্রিয়ার জন্য সিনেটে পাঠানো হোক।

ভার্জিনিয়া থেকে নির্বাচিত ডেমোক্র্যাট সিনেটর টিম কেইন বলেছেন, অভিশংসন দণ্ড নিশ্চিত না হলেও ট্রাম্পের তাঁর কৃতকর্মের ফলাফল পাওয়া উচিত।

স্পিকার ন্যান্সি পেলোসিও বলেছেন, ক্ষমতার শেষ দিকে এসে ট্রাম্পের বেপরোয়া কার্যক্রমের জন্য তিনি কোনো পরিণতি ভোগ না করলে তা ভবিষ্যতের জন্য খারাপ নজির হবে।

৬ জানুয়ারি ট্রাম্প তাঁর সমর্থকদের ওয়াশিংটন ডিসিতে জড়ো করেন। তিনি সমর্থকদের উসকানি দেন। নির্বাচনী ব্যবস্থাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে বক্তৃতা দেন। ভোটের ফলাফল পাল্টে দেওয়ার চেষ্টা করেন। তাঁর উসকানিতেই ক্যাপিটল ভবনে হামলা হয়।
এসব কারণে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে অন্তত একটা নিষিদ্ধকরণ প্রস্তাব সিনেটে নেওয়া যায় কি না, তা নিয়ে নেপথ্যের আলাপ-আলোচনা শুরু হয়েছে। এমন প্রস্তাবের মাধ্যমে ট্রাম্পকে আগামী নির্বাচনে প্রার্থী হওয়া বা কোনো ফেডারেল পদে দায়িত্ব গ্রহণে নিষিদ্ধ করা হতে পারে।

মার্কিন সংবিধানের ১৪তম সংশোধনীতে বলা আছে, কোনো ব্যক্তি সরকার উৎখাতের জন্য বা সরকারের বিরুদ্ধে সহিংসতায় যুক্ত থাকলে, তাঁকে সরকারের কোনো দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধ করা হবে।

অভিশংসন দণ্ড কার্যকর না হলেও ট্রাম্পের বিরুদ্ধে সংবিধানের ১৪তম সংশোধনী কার্যকর করার চেষ্টা নিয়ে এখন ডেমোক্র্যাটদের পক্ষ থেকে আলোচনা চলছে। এমন আলোচনার ইঙ্গিতও দিয়েছেন সিনেটর টম কেইন।

ফেব্রুয়ারি দ্বিতীয় সপ্তাহে ট্রাম্পের অভিশংসন আদালতের কাজ সিনেটে শুরু হলে বিষয়গুলো আরও স্পষ্ট হয়ে উঠবে। অনেকেই বোঝার চেষ্টা করছেন, সিনেটে উপস্থাপিত প্রমাণাদি বা যুক্তিতর্কের পর রিপাবলিকান আইনপ্রণেতাদের মধ্যে কোনো নাটকীয় পরিবর্তন আসে কি না; যদিও এমন সম্ভাবনা খুবই ক্ষীণ বলে মনে করা হচ্ছে।
ট্রাম্পের অভিশংসন দণ্ড নিয়ে সরাসরি কোনো কথা বলেননি প্রেসিডেন্ট বাইডেন। হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি জেন সাকি বলেছেন, প্রেসিডেন্ট বাইডেন বিষয়টি সিনেটের স্বাভাবিক প্রক্রিয়ার ওপরই ছেড়ে দিয়েছেন।

প্রেসিডেন্ট বাইডেন তাঁর কর্মসূচি নিয়ে দ্রুততার সঙ্গে কাজ করাকেই অগ্রাধিকার বলে মনে করছেন বলে তাঁর ঘনিষ্ঠজনেরাও সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *