ইয়াঙ্গুনে রাতভর অভিযান দিনে বিক্ষোভে গুলি

মিয়ানমারের বৃহত্তম শহর ইয়াঙ্গুনে বৃহস্পতিবার রাতভর অভিযান চালিয়েছে দেশটির পুলিশ। এ সময় বেশ কয়েকজনকে আটক করা হয়। সেনা অভ্যুত্থান ও গ্রেফতারের প্রতিবাদে শুক্রবার সকালে রাজপথে নামেন হাজার হাজার বিক্ষোভকারী। তাদের রুখতে মারমুখী অবস্থান নেয় পুলিশ ও সেনাবাহিনী। নির্বিচারে গুলি ছুড়ে বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করে দেওয়া হয়। এছাড়া দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর মান্দালেতেও গুলি হয়েছে। এতে বেশ কয়েকজন আন্দোলনকারী আহত হয়েছেন। এদিকে সেনা কর্তৃপক্ষের নিয়োগ করা নির্বাচন কমিশন মিয়ানমার নভেম্বরের নির্বাচনকে অবৈধ ঘোষণা করেছে। খবর বিবিসি, রয়টার্স ও এএফপিসহ বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের।

প্রত্যক্ষদর্শীরা গণমাধ্যমকে বলেছেন, ইয়াঙ্গুনের তামওয়ে এলাকায় সেনা কর্তৃপক্ষের নিয়োগ দেওয়া কর্মকর্তাদের মানছেন না স্থানীয় লোকজন। বৃহস্পতিবার রাতে স্থানীয়রা এক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বিক্ষোভ দেখান। এ সময় দাঙ্গা পুলিশ বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে ফাঁকা গুলি ছোড়ে। ব্যবহার করে সাউন্ড গ্রেনেড। পরে সেখানকার বিভিন্ন বাড়িতে রাতভর অভিযান চালানো হয়।

রাতভর পুলিশের মারমুখী আচরণ সম্পর্কে সেখানকার এক বাসিন্দা বলেন, আমরা সত্যিই ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পড়েছিলাম। সকালে এলাকাটির বাসিন্দারা সড়কে সাউন্ড গ্রেনেডের খোসা পড়ে থাকতে দেখেন। এ ছাড়া সড়কে ছড়িয়ে ছিটিয়ে ছিল বিক্ষোভকারীদের জুতা।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের এমন সাংঘর্ষিক অবস্থানে এ কথা স্পষ্ট হয়ে উঠছে যে, দেশটির সামরিক জান্তা সমাজের সব মহল থেকে প্রতিরোধের মুখে পড়ছে। মিয়ানমারের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমে বলা হয়েছে, এই বিক্ষোভের ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে ২৩ জনের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। তাদের মধ্যে ১০ জন নারী। মিয়ানমারে গত নভেম্বরের নির্বাচনে অং সান সু চির ক্ষমতাসীন দল ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসি (এনএলডি) বিপুল জয় পায়। কিন্তু নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ তোলে সেনাবাহিনী। তারা পার্লামেন্টের প্রথম অধিবেশন শুরুর কয়েক ঘণ্টা আগে ১ ফেব্রুয়ারি ভোরে সামরিক অভ্যুত্থান করে। এদিন সেনাপ্রধান মিন অং হ্লাইংয়ের নেতৃত্বাধীন সেনাবাহিনী সু চির সরকারকে উৎখাত করে ক্ষমতা দখল করে। এরপর দেশজুড়ে জরুরি অবস্থা জারি করা হয়। সেনাবাহিনী সু চি ও প্রেসিডেন্ট উইন মিন্টসহ রাজনৈতিক নেতাদের গ্রেফতার করে। জরুরি অবস্থার মধ্যেই জান্তা শাসনবিরোধী আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন দেশটির জনগণ।

এবার যুক্তরাজ্যের নিষেধাজ্ঞা : সেনা অভ্যুত্থানে যুক্ত মিয়ানমারের সেনা কর্মকর্তাদের ওপর নতুন করে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে যুক্তরাজ্য। নতুন এই পদক্ষেপের আওতায় সেনাপ্রধান মিন অং হ্লাইং ছাড়াও রয়েছেন সেনা সরকার গঠিত স্টেট অ্যাডমিনিস্ট্রেশন কাউন্সিলের আরও পাঁচ সদস্য। এছাড়া মিয়ানমারের সেনাবাহিনী সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে ব্রিটিশ কোম্পানিগুলো আর ব্যবসা করবে না বলেও জানানো হয়েছে। ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোমিনিক রাব এক বিবৃতিতে বলেছেন, আজকের প্যাকেজ পদক্ষেপের মধ্য দিয়ে মিয়ানমারের সেনা শাসকদের পরিষ্কার বার্তা দেওয়া হয়েছে যে, যারা মানবাধিকার লঙ্ঘনে দায়ী তাদের জবাবদিহি করতে হবে আর মিয়ানমারের জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের কাছে সরকারি দায়িত্ব অবশ্যই হস্তান্তর করতে হবে।

এর আগে মিয়ানমারের সেনা কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে একই ধরনের পদক্ষেপ নেয় যুক্তরাষ্ট্র। একই ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হতে পারে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়নও।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *