বিএনপির নেতা-কর্মী-সাংবাদিকদের বাসাবাড়িতে হামলা ইসলামী মৌলবাদের সমালোচনার কারণে, প্রশাসনের নিরবতায় বাড়ছে আতঙ্ক
২০২৪ সালের ৫ই অগাস্ট অভ্যুত্থান পরবর্তী বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে বড় ধরনের পরিবর্তন এসেছে। বর্তমানে দেশে ক্ষমতায় আছেন অন্তর্বর্তীকালীন ড. মুহাম্মদ ইউনুস সরকার। বিএনপি এবং জামায়াত এর রাজনীতিতে পুনর্বাসন হয়েছে। অথচ, বিএনপির সাথে সরাসরি সংশ্লিষ্ট যারা তারাও সাম্প্রতিক সময়ে এসে বাংলাদেশের পুনরত্থিত ইসলামী মৌলবাদ এবং ধর্মীয় উগ্রবাদ বিরোধী অবস্থান নেয়ার কারণে এবং লেখালিখি করায় একদল লেখক ও ব্লগারের বসতবাড়িতে ধারাবাহিকভাবে একাধিক হামলার ঘটনা ঘটেছে দেশের বিভিন্ন স্থানে। মাঝারি সারির কিছু নেতৃবৃন্দ এ-ব্যাপারে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নেতারা বলেন – এধরণের ঘটনা ঘটছে প্রচুর, কিন্তু প্রচারণা নেই।

এই হামলার ঘটনাগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো শাহরিয়ার মোঃ নাফিস খান, যিনি যুক্তরাজ্য যুবদলের একজন যুগ্ম সম্পাদক। সুদীর্ঘদিন জাতীয়তাবাদী রাজনীতির সাথে যুক্ত থাকা সত্ত্বেও ইসলামী মৌলবাদী সংগঠনগুলোর ব্যাপারে লেখালেখির জের ধরেই ধারণা করা হয় কতিপর দুর্বৃত্তকারী তার ঢাকা শহরের মালিবাগের কয়েকবার হামলা করেন। এর মধ্যে গত ২ মার্চ তার বাসায় হামলা চালিয়ে ভাংচুর করা হয়, এবং তার বাবা নজরুল ইসলাম খান খানিক আহত হন এবং স্থানীয় ক্লিনিকে চিকিতসা-সেবা নিতে বাধ্য হঊন।। এছাড়াও যুক্তরাজ্য যুবদলের যুগ্ম সম্পাদক লেখক মুকিত চৌধুরীর হবিগঞ্জের জামালখান সড়কের বাসায় গত ফেব্রুয়ারি মাসের ২৭ তারিখ হামলা চালানো হয়, যেখানে তার বড় ভাই এনামুল চৌধুরী আহত হন। তিনিও ইসলামী মৌলবাদের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়ার জন্যে সোচ্চার একজন বিএনপি নেতা হিসেবে পরিচিত।

জাতীয়তাবাদী ধারার লেখক ব্লগার ও সাংবাদিক গাজী মোহাম্মদ সাইফুল ইসলামের উত্তর গোরান, সিপাহীবাগের বাসায়ও জঙ্গী মৌলবাদীদের হানা দেয়ার ঘটনা ঘটে আসছে বেশ কয়েক মাস ধরে। গত ৩রা মার্চ সর্বশেষ হামলায় তার পরিবারের সদস্যদের লাঞ্চিত করা হয় এবং তার পিতা এ কে এম শফিকুল ইসলামও আহত হন। রাজশাহীর বাঘার থানা বিএনপির পৌর সম্পাদবক মিজানুর রহমানের দক্ষিণ মিলিক বাঘার বাড়িতেও সর্বশেষ হামলার ঘটনা ঘটেছে গত ৪ঠা মার্চ। এই ঘটনায় হামলাকারীরা ভাঙচুর চালালে মিজানুর রহমানের ছোট ভাই শাহিনুর রহমানের সাথে ধক্কাধাক্কির ঘটনা ঘটে।
এদের প্রত্যেকেই ইসলামী কোনো উগ্রবাদী রাজনীতির সাথে বিএনপি দূরত্ত্ব রচনার জন্যে লিখে আসছেন এবং প্রগতিশীল্ ও সেকুল্যার বাংলাদেশের আশা ব্যাক্ত করে আসছেন। তাদের এতদসংক্রান্ত লেখালিখি মূলতঃ এথিস্ট ইন বাংলাদেশ, এথিস্ট নোট, এবং দৈনিক নবযুগ এর মতো বিতর্কিত অনলাইন মিডিয়া এবং প্ল্যাটফর্মে প্রকাশিত হয়েছে। বিশেষ করে এথিস্ট ইন বাংলাদেশ এবং এথিস্ট নোট ইসলামী বিভিন্ন গোষ্ঠীর দীর্ঘদিনের রোষানলের শিকার।

আক্রান্তদের বাসাবাড়িতে এসব একাধিক হামলার ঘটনায় তাদের পরিবারের সদস্যদের সাথে যোগাযোগ করা হলে, নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পরিবারগুলোর সদস্যরা জানান, হামলার বিষয়ে থানায় অভিযোগ দায়েরের চেষ্টা করা হলেও থানা এসব বিষয়ে অভিযোগ নিতে আপত্তি জানায়। এর ফলে পরিবারগুলো নিরাপত্তাহীনতায় এবং অধিকার বঞ্চনায় ভুগছেন।
সূত্র জানায়, এই জাতীয়তাবাদী নেতা/কর্মী/লেখক/সাংবাদিকরা দীর্ঘদিন ধরে বিএনপির রাজনীতির সাথে যুক্ত হলেও, তাদের ওপর হামলার ঘটনাগুলো শুধুমাত্র রাজনৈতিক বা আদর্শগত দ্বন্দ্বের বাইরে গিয়ে মানবিক নিরাপত্তার সংকটে পরিণত হয়েছে। এসব হামলা পরিবারগুলোর জন্য শঙ্কা এবং আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে, এবং দিন দিন তা বৃদ্ধি পাচ্ছে।