২০ বছরেই শেষ নয়, খাটতে হবে যাবজ্জীবনের বাকি সাজা

ধর্ষণ মামলায় যাবজ্জীবন সাজা হয়েছিলো ধর্ষক আলম মুন্সীর। ২০ বছর ধরে আছেন কারাগারে। অবশিষ্ট সাজা ভোগ না করার জন্য আবেদন জানিয়েছিলেন দেশের সর্বোচ্চ আদালত আপিল বিভাগে। প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের চার বিচারপতির বেঞ্চ আজ বৃহস্পতিবার ( ২৬ নভেম্বর) ঐ আবেদন খারিজ করে দেন। বেঞ্চের অপর সদস্যরা হলেন, বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী, বিচারপতি মো. নূরুজ্জামান ও বিচারপতি ওবায়দুল হাসান।

আপিল বিভাগের এই আদেশের ফলে আসামি আলম মুন্সীকে যাবজ্জীবনের অবশিষ্ট সাজা ভোগ করতে হবে বলে জানিয়েছেন আইনজীবীরা। আদালতে রাষ্ট্রপক্ষের ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিশ্বজিত দেবনাথ ও আসামি পক্ষে ড. বশির আহমেদ শুনানি করেন।

বিশ্বজিত দেবনাথ ইত্তেফাককে বলেন, এই মামলায় হাইকোর্টের রায়ে পর্যবেক্ষণ দিয়ে বলা হয়েছিলো যে, আমাদের দেশে বিদ্যমান সমাজ ব্যবস্থায় একজন বিবাহিত মহিলা যখন কোর্টে দাঁড়িয়ে একজন ধর্ষককে চিহ্নিত করে বলে, ঐ ব্যক্তি তাকে ধর্ষণ করেছে তখন ধরেই নিতে হয় সে মিথ্যা কথা বলে না। কারণ আমাদের সমাজ ব্যবস্থা ধর্ষণের শিকার নারীকে অনেক সময় বাকাচোখে দেখে থাকে। গুরুত্বপূর্ণ এই পর্যবেক্ষণ বিষয়টি আপিল বিভাগের শুনানিতে পেশ করা হয়েছে। তিনি বলেন, এই মামলায় ধর্ষণের শিকার নারীর স্বামী ও তার দুজন নিকট আত্মীয় আদালতে সাক্ষ্য দিয়েছেন। যার মধ্যে দু’জন চাক্ষুস সাক্ষী ছিল। ছিলো মেডিকেল রিপোর্ট। সাক্ষ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে ট্রাইব্যুনাল আসামিকে যাবজ্জীবন দণ্ড দিয়েছে।

প্রসঙ্গত ১৯৯৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর পটুয়াখালীর কলাপাড়া থানার চরপাড়া গ্রামে এক নারীকে ধর্ষণ করেন আসামি আলম মুন্সী। পরদিন এ ঘটনায় কলাপাড়া থানায় মামলা করেন ঐ নারী। তদন্ত শেষে পুলিশ তদন্ত প্রতিবেদন দেয়। এরপরই এই মামলায় ২০০০ সালের ১৬ আগস্ট পটুয়াখালীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন বিশেষ আদালত-২ আলম মুন্সীকে যাবজ্জীবন সাজা দেয়। নারী ও শিশু নির্যাতন (বিশেষ বিধান) আইন, ১৯৯৫ এর ৬(১) ধারায় এই দণ্ড দেওয়া হয়।

এই সাজার রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আপিল করেন আসামি। আসামির আপিল খারিজ করে হাইকোর্ট ২০০৪ সালের ১৭ আগস্ট ট্রাইব্যুনালের দেয়া যাবজ্জীবন সাজার রায় বহাল রাখে। এর বিরুদ্ধে ২০০৫ সালে আপিল করে আসামি। সম্প্রতি আপিল বিভাগে আসামি একটি আবেদন দাখিল করেন। ঐ আবেদনে বলা হয়, আলম মুন্সী ২০০০ সালের ১৬ আগস্ট থেকে এখন পর্যন্ত কারাগারে আছেন। সেই হিসাবে আসামি ২০ বছর তিন মাস সাজা ভোগ করে ফেলেছেন। এখন আসামির বয়স ৫৩ বছর। তার স্ত্রী, তিন সন্তান ও বৃদ্ধ মা রয়েছে। এই পর্যায়ে তাকে অবশিষ্ট সাজা ভোগ থেকে অব্যাহতি দেওয়ার আবেদন করা হয়। শুনানি শেষে আপিল বিভাগ তার আবেদন খারিজ করে দেয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *