প্রবাসি ডেন্টিস্টকে ভুয়া মামলা দিয়ে হয়রানি
যুক্তরাজ্য প্রবাসী চিকিৎসক ইশরাত রশিদকে ভুয়া মামলা দিয়ে হয়রানির অভিযোগ উঠেছে ওয়ারি পুলিশের বিরুদ্ধে। জানা গেছে গত ১৭ সেপ্টেম্বর তারিখে ইশরাত রশিদের ওয়ারির বাসায় স্থানীয় থানার ওসি’র নেতৃত্বে একটি দল ইশরাত রশিদের বাসায় যান এবং ইশরাতের রশিদের বিরুদ্ধে ওয়ারি থানায় দুইদিন আগে একটি মামলা হয়েছে বলে জানান। যদিও পুলিশ প্রাথমিক ভাবে মামলার কোনো কাগজ পত্র দেখাতে পারেন নি।
ইশরাত রশিদের মা নুরতাজ বেগম পুলিশের দলটিকে জানান যে তাঁর মেয়ে গত বছরই উচ্চ শিক্ষার জন্য যুক্তরাজ্যে চলে গেছেন। এই তথ্য জানবার পরেও ইশরাত রশিদের বাসায় পুলিশ ক্রমাগত আসে এবং এক পর্যায়ে গত ৩ অক্টোবর ইশরাত রশিদের যুক্তরাজ্যের ভিসা পুলিশের কাছে প্রদর্শন করবার পরেও সেই কথা তারা বিশ্বাস করেনি। পুলিশের ভাষ্যমতে জনৈক ইকবাল পাটোয়ারীর বিরুদ্ধে ওয়ারি থানার ইনচার্জ ওসি হারুনুর রশিদ নিজে বাদী হয়ে ১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইনে ১৫(৩) ধারাতে একটি মামলা দায়ের করেন এবং সেখানে ৮০ জন আসামীর নাম উল্লেখিত রয়েছে। এই ৮০ জন আসামীর বাইরে ৮১ নং আসামীর নামের স্থলে পুলিশ ‘অজ্ঞাতনামা’ লিখে রাখেন। এভাবে মামলায় অজ্ঞাতনামা লিখে পরবর্তী সময়ে তদন্তের নামে বিভিন্ন ব্যাক্তিকে নানানভাবে হয়রানির অভিযোগ পুলিশের বিরুদ্ধে নতুন নয়। এই অজ্ঞাতনামা আসামীর সূত্র ব্যবহার করে পুলিশ অত্র এলাকার বিরোধী দলের রাজনৈতিক কর্মী সহ অনেককেই হয়রানি করে আসছে বলে জানা যায় এবং একই সাথে এই মামলার হুমকি দিয়ে অর্থ আদায়ের ঘটনা হর হামেশাই ঘটে থাকে।
এদিকে ইশরাত রশিদের বাসায় পুলিশের এই বারাবার করে আসা এমন অহেতুক উত্যক্তের কারনে তাঁড় মা বাসা ছেড়ে দিতে বাধ্য হন। বর্তমানে তিনি কঠায় আছেন কেউ-ই জানেনা। এই ব্যাপারে ইশরাতদের এলাকায় সাধারোন মানুষদের মধ্যে এক ধরনের চাঞ্চ্যল্যের তৈরী হয়েছে। সাধারন জনগন ‘অজ্ঞাতনামা’ নাম দিয়ে এই মামলাকে রাজনৈতিক হয়রানি হিসেবেই দেখছেন। এই বিষয়ে সূপ্রীম কোর্টের আইনজীবি খন্দকার মাহবুব বলেন- পুলিশকে সন্তুষ্ট করতে পারলে আসামী ছেড়ে দেয়, না হলে মামলা দিয়ে দেয়। এটাই অজ্ঞাতনামা মামলা দায়েরের মূল রহস্য। আর এর মাধ্যমে পুলিশ গ্রেফতার বাণিজ্য করছে। পুলিশের অজ্ঞাতনামা আসামী করাকে মানবাধিকারের জন্য চরম অবমাননাকরই নয় মানবতার প্রতি চরম অবজ্ঞা মন্তব্য করে অবিলম্বে পুলিশের গ্রেফতার বাণিজ্য বন্ধের আহবান জানিয়েছেন। এছাড়া আগাম জামিন নিয়ে সংবাদপত্রে প্রতিবেদন প্রকাশকে দুঃখজনক বলে মন্তব্য করেছেন তিনি।
গতকাল বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের পক্ষে ‘হয়রানিমূলক মামলায় সুপ্রিমকোর্টের ভূমিকা’ শীর্ষক সাংবাদিক সম্মেলন তিনি এ আহবান জানান। খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, সারা দেশে রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে ভোটারবিহীন নির্বাচনের পূর্বে এবং পরে ঢালাওভাবে মামলা হচ্ছে। এ ধরনের মামলায় বেশীর ভাগ ক্ষেত্রে কয়েক জন আসামীর নাম দিয়ে অজ্ঞাতনামা আরও ২ থেকে ৩শ এমনকি কয়েক হাজার আসামীর নাম করা হয়ে থাকে।
তিনি বলেন, এসব মামলায় অজ্ঞাত একজনকে পুলিশ ধরে নিয়ে তাদের সন্তুষ্ট করতে পারলে তাকে ছেড়ে দেয়া হয়। পুলিশকে সন্তুষ্ট না করতে পারলে মামলায় আসামী করা হয় এটাই অজ্ঞাতনামার রহস্য। অজ্ঞাতনামা আসামী দিয়ে মামলা করে পুলিশ শুধু মানবাধিকারের চরম অবমাননাই করছে না মানবতার প্রতি চরম অবজ্ঞা করছে। তিনি বলেন, পুলিশের নির্যাতন হতে রক্ষা পাওয়ার জন্য প্রত্যন্ত অঞ্চল হতে গ্রেফতারের ভয়ে আগাম জামিন নিতে শত শত লোক হাইকোর্টে আসেন। ফলে বিপুল সংখ্যাক আগাম জামিনের দরখাস্ত শোনা বিচারপতিদের জন্য কঠিন ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায়। তা সত্ত্বেও বিচারপতিরা অত্যন্ত ধৈর্য ও পরিশ্রম করে অযথা হয়রনিমূলক মামলা হতে নিরীহ মানুষকে পুলিশের নির্যাতনের হাত হতে রক্ষা করার জন্য আগাম জামিন দেন।
একজন প্রবাসীকে কেন এইভাবে হেনস্থা করা হচ্ছে এই ব্যাপারে ওয়ারি থানার ওসি হারুন উর রশিদের সাথে কথা বলতে গেলে তিনি এই প্রতিবেদকের সাথে কোনো কথা বলবেন না বলেই আমাদের জানান।
