চতুর্থদিনের মতো অসহযোগ চলছে, কালো ব্যাজ ধারণ

১৯৭১ সালের ১১ মার্চ বাংলাদেশের অসহযোগ আন্দোলনের চতুর্থ দিন শান্তিপূর্ণভাবে অতিবাহিত হয়। কেন্দ্রীয় ও প্রাদেশিক সরকারের সকল অফিস, আধা-সরকারি অফিস, স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা হাইকোর্ট ও অন্যান্য আদালত এবং সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান অন্যান্য দিনের মতো বন্ধ ছিল।

১৯৭২ সালের ১২ মার্চে প্রকাশিত পত্রিকায় আগের দিনের ঘটনাগুলোর বর্ণনা ধারাবাহিকভাবে প্রকাশ করা হয়। খবরে বলা হয়, গত ৭ মার্চ আওয়ামী লীগ প্রধান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান রেসকোর্স ময়দানে শান্তিপূর্ণ অসহযোগ আন্দোলনের আহ্বান জানান। নির্বাচিত প্রতিনিধিদের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরসহ চার দফা দাবি পেশ করে তা পূরণ না হওয়া পর্যন্ত এ আন্দোলন চলবে বলে তিনি ঘোষণা করেন। আন্দোলনের আওতা থেকে অব্যাহতি দেওয়া প্রতিষ্ঠান ছাড়া অন্য কোনও অফিসের একজন কর্মচারীও কাজে যোগ দেননি। এদিকে সকল বাড়িঘর, দোকানপাট অফিস-আদালতে কালো পতাকা উড়ানো অব্যাহত ছিল। জনসাধারণ কালোব্যাজ ধারণ করে।

ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থান থেকে সর্বত্র বঙ্গবন্ধুর অসহযোগ আন্দোলনে সাড়া দিয়ে হরতালের খবর পৌঁছাতে থাকে। একইসঙ্গে বিভিন্ন রাজনৈতিক সংস্থা ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠান আন্দোলনের প্রতি ব্যাপক সমর্থন দেয়। অসহযোগ আন্দোলন চলাকালে জনসাধারণকে যাতে দুর্ভোগ পোহাতে না হয় তার জন্য এদিন আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে তাজউদ্দীন আহমেদ ব্যাংক অফিস ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের প্রতি কতিপয় নির্দেশ জারি করেন।

ভুট্টোর তারবার্তা এসেছিল?
বিভিন্ন মাধ্যমে দাবি করা হয়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের কাছে ভুট্টোর তারবার্তা এসেছে। তিনি ঢাকায় আসতে রাজি আছেন। সেই সময়টায় বাংলাদেশের বিরুদ্ধে অন্তরালে চক্রান্ত অব্যাহত ভাবে চলতে থাকে। তবে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বঙ্গবন্ধুর কাছে ভুট্টো একটি তার বার্তা পাঠিয়েছেন বলে যে গুজব রটানো হয়েছিল তা অস্বীকার করা হয়। এছাড়া ষড়যন্ত্রকারীদের নষ্টের গুরু ইয়াহিয়া খান আলাপ-আলোচনার জন্য ঢাকা যাচ্ছেন বলে খবর রটানো হলেও ইয়াহিয়া কবে, কখন, কিভাবে ঢাকায় আসবেন সে সম্পর্কে সঠিক কোনও খবর পাওয়া যায়নি।

১৯৭১ সালের ১২ মার্চের ইত্তেফাকে প্রকাশিত সংবাদ বলছে, অবিলম্বে প্রতিকার না করা গেলে পশ্চিম পাকিস্তানের অর্থনীতি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। নিউজপ্রিন্টের অভাবে পশ্চিম পাকিস্তানের সংবাদপত্রের কলেবর হ্রাস করা হয়েছে। করাচি-ডনসহ পশ্চিম পাকিস্তানের পত্রিকাগুলোর কলেবর ১৪ পৃষ্ঠার পরিবর্তে মাত্র ৪ পৃষ্ঠা ছাপা হয়েছে। এসব পত্রিকা খুলনা নিউজপ্রিন্ট মিলের কাগজ ব্যবহার করে। গত ১ মার্চ থেকে খুলনা নিউজপ্রিন্ট মিল থেকে পশ্চিম পাকিস্তানে চালান বন্ধ করা হয়। এইদিনে ৩২ হাজার টন গমভর্তি জাহাজ ভিনটেজ হরিজন ১৩ মার্চ চট্টগ্রাম বন্দরে পৌঁছানোর কথা থাকলেও গতিপথ পরিবর্তন করে করাচি অভিমুখে যাত্রা করেছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *