মাদারীপুরে বাংলাবাজার ট্র্যাজেডির এক বছর পূর্তি আজ
নিজস্ব সংবাদদাতা, মাদারীপুর ॥ মাদারীপুরের শিবচর বাংলাবাজার ট্র্যাজেডির এক বছর পূর্তি আজ। ২০২১ সালের ৩মে বাংলাবাজার-শিমুলিয়া নৌপথে শিবচর কাঁঠালবাড়ি ঘাট সংলগ্ন এলাকায় বাল্কহেডের সাথে স্পিডবোটের সংঘর্ষে ২৬জন নিহত। সেদিন করোনার বিধিনিষেধ ভঙ্গ করে ভোর ৬টার দিকে শিমুলিয়া থেকে যাত্রীবোঝাই একটি স্পীডবোট বাংলাবাজারের উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। স্পীডবোটটি কাঁঠালবাড়ি (পুরাতন ফেরিঘাট) ঘাটের কাছে আসলে নদীতে থাকা একটি বাল্কহেড (বালু টানা কার্গো) এর পেছনে সজোরে ধাক্কা লেগে উল্টে যায়।
খবর পেয়ে নৌপুলিশের একটি দল ঘটনাস্থলে গিয়ে উদ্ধার অভিযান শুরু করেন। পরে পুলিশ, ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা উদ্ধার অভিযানে অংশগ্রহণ করে। উদ্ধার করা হয় ২৬ জনের লাশ। এ ঘটনায় মাদারীপুর জেলা প্রশাসনের স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালক আজহারুল ইসলামকে প্রধান করে ৬ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি ও বিআইডব্লিউটিএর পক্ষ থেকে পৃথক দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। গ্রেপ্তার হয় স্পিডবোটের মালিক ও চালককে।
এ ঘটনায় নৌ পুলিশের দায়ের করা মামলায় ইতোমধ্যেই চার্জশীট প্রদান করে পুলিশ। চার্জশীটে করোনা মহামারীর মধ্যে সরকারের দেয়া লকডাউন অমান্য করে ও ধারণ ক্ষমতার অতিরিক্ত যাত্রী নিয়ে দ্রুত গতিতে স্পীডবোট চালানোর কারণেই দূর্ঘটনার কারণ হিসেবে উল্ল্যেখ করা হয়।
চার্জশীটে বলা হয়, লকডাউন অমান্য করে ২০২১ সালের ৩ মে সকাল আনুমানিক ৬টার সময় শিমুিলয়া ঘাট ইজারাদার মুন্সিগঞ্জ জেলার লৌহজং থানার মেনিদীমন্ডল ইউনিয়নের উত্তর জশলদিয়া গ্রামের মৃত ডা: রমিজ উদ্দিন আহমেদের ছেলে মো: শাহ আলম খানের (৪০) সাথে যোগসাজস করে স্পীডবোট মালিক মুন্সিগঞ্জের জশলদিয়া পূনর্বাসন কেন্দ্রের মৃত আনু মৃধার ছেলে চাঁন মিয়া মৃধা (৩৫) ও একই এলাকার মৃত দবির টুনির ছেলে মো: জহিরুল ইসলাম টুনি (৩২) শিমুলিয়া ঘাট থেকে বাংলাবাজার ও কাঁঠালবাড়ি ঘাটগামী ৩২জন যাত্রীদেরকে লাইফ জ্যাকেট আছেসহ বিভিন্ন আশ্বস্তÍমূলক কথা বলে তাদের মালিকানাধীন স্পীডবোটে তুলে। পরে চালক বরিশালের আগৈলঝারা থানার গৈলা ইউনিয়নের নগরবাড়ি গ্রামের আবুল কালামের ছেলে মো: শাহ আলম (৩৮) ৩২ জন যাত্রী নিয়ে দ্রুত ও বেপরোয়া গতিতে চালিয়ে বাংলাবাজার ও কাঁঠালবাড়ি ঘাটের উদ্দেশ্যে রওনা দেয়।
তদন্ত কমিটির প্রধান স্থানীয় সরকার বিভাগ মাদারীপুর উপ-পরিচালক মোঃ আজহারুল ইসলাম বলেন, “গত বছর পদ্মায় বাল্কহেডের সাথে স্পীডবোটের ধাক্কায় ২৬ যাত্রী নিহতের ঘটনায় আমরা তদন্ত করতে গিয়ে স্পীডবোট চালকসহ ঘাট সংশ্লিষ্টসহ বিভিন্ন জনের সাথে কথা বলে দূর্ঘটনার কারণ নির্ণয় করে একটি বিস্তারিত রিপোর্ট দিয়েছি। তদন্ত করতে গিয়ে যে বিষয়টি আমরা বুঝতে পেরেছি তা হলো, স্পীডবোট চালকদের কোন প্রশিক্ষন নেই, স্পীডবোটের কোন লাইসেন্স নেই, অনেক চালক নেশার সাথে সম্পৃক্ত, ঘাট ব্যবস্থাপনায়ও বেশ কিছু ক্রটি রয়েছে।এ ব্যাপারে আমরা স্পীডবোটের লাইসেন্স করা, চালকদের প্রশিক্ষন প্রদান, মাঝে মাঝে চালকদের ডোপটেষ্ট করানো, যাত্রীদের লাইফ জ্যাকেট ব্যবহারসহ নিরাপত্তা প্রদানের ব্যবস্থা করার সুপারিশ করেছিলাম। আর লকডাউনের মধ্যে স্পীডবোট চলাচলে নিষেধাজ্ঞা ছিল। নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে ঘাট সংশ্লিষ্টরা যদি স্পীডবোট না চালাতো তাহলে কিন্তু এত বড় দূর্ঘটনা ঘটতো না।”