পুলিশের বাধার মুখে বিএনপির বিক্ষোভ, মিরপুরে গ্রেপ্তার ২, আহত ১৩

ঢাকায় সমাবেশ করতে না দেওয়া এবং কর্মসূচিতে বাধা দেওয়ার প্রতিবাদে গতকাল বুধবার দেশের বিভিন্ন জায়গায় বিক্ষোভ করেছে বিএনপি। দলটির গতকালের বিক্ষোভ কর্মসূচিতেও বিভিন্ন জায়গায় পুলিশ বাধা দিয়েছে।৩০ ডিসেম্বর ২০১৮ নির্বাচনের দ্বিতীয় বর্ষপূর্তিতে ‘গণতন্ত্র হত্যা দিবস’ পালন করতে ওই দিন সারা দেশে বিক্ষোভ এবং ৩০ ডিসেম্বর রাজধানীতে সমাবেশের কর্মসূচি দিয়েছিল বিএনপি। অন্তত ১৬টি জেলায় বিএনপির কর্মসূচিতে বাধা এসেছিল; আর ঢাকায় সমাবেশ করার অনুমতি মেলেনি।

এসবের প্রতিবাদে গতকাল দেশের সব জেলা ও মহানগর এবং রাজধানীর থানায় থানায় বিক্ষোভ কর্মসূচি দেয় বিএনপি। তবে সিলেট, ময়মনসিংহ, বরিশাল, খাগড়াছড়িসহ বিভিন্ন জায়গায় গতকালও বিএনপির কর্মসূচি পুলিশের বাধার মুখে পড়ে। 

সরকারের এই আচরণের পরিপ্রেক্ষিতে বিএনপির নেতারা মনে করছেন, বিএনপির ব্যাপারে সরকারের কঠোর অবস্থানের পরিবর্তন হয়নি, ভবিষ্যতে সরকার আরও কঠোর হবে। বিএনপি যতই নমনীয় হোক না কেন, সরকারের আচরণে শিগগিরই কোনো পরিবর্তন আসবে না।

বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মো. শাহজাহান প্রথম আলোকে বলেন, সরকারের আচরণে কোনো নমনীয়তা লক্ষ করা যাচ্ছে না।

বিভিন্ন জায়গায় বাধা – মিরপুরে আহত ১৩, গ্রেপ্তার ২গতকাল বিকেলে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক ব্রিফিংয়ে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী অভিযোগ করেন, বিভিন্ন জায়গায় বিএনপির বিক্ষোভ কর্মসূচিতে পুলিশ হামলা ও তাণ্ডব চালিয়েছে। আগের রাতে নেতা-কর্মীদের বাসায় পুলিশ গিয়ে অনেককে গ্রেপ্তার করেছে। রাজধানীর শাহ আলী থানা বিএনপির মিছিল থেকে পাঁচজনকে গ্রেপ্তার এবং কামরাঙ্গীরচরে মিছিলে পুলিশ ও ছাত্রলীগ-যুবলীগ হামলা চালিয়ে সাতজনকে আহত করে। এছাড়াও মিরপুরে রূপনগর থানার পুলিশ স্থানীয় বিএনপি/জামায়াত কর্মী-সমর্থকদের এক শান্তিপূর্ণ মিছিলকে সরকারী অফিস ও সম্পত্তি বিনষ্ট করার মিথ্যে অভিযোগে ঐ মিছিলে অংশগ্রহনকারীদের ওপর নির্বিচারে ছত্রভঙ্গ করবার জন্যে লাঠিপেটা করে যাতে ১৩ জন আহত হয়ে স্থানীয় হাসপাতালে চিকিতসা গ্রহন করতে বাধ্য হয়। উলিয়ার হোসেন ও এনামুল হক নামক দুজনকে গ্রেপ্তার ও আরো কিছু অজ্ঞাতনামাদের নিয়ে রূপনগর থানার পুলিশ বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেছে বলে জানা যায়।

এই ব্য্যপারে মন্তব্য করতে বললে রূপনগর থানার এস.আই আল মামুন বলেন প্রায় সাত-আটজনকে চিহ্নিত করা হয়েছে এই নাশকতামূলক মিছিলে ভূমিকা রাখার কারণে এবং বাকিদের-ও চিহ্নিত করার জন্যে অনুসন্ধান চলছে। পরে আরো খোঁজ নিয়ে জানা যায় মামলার এজাহারে গ্রেপ্তারকৃতদের যুক্তরাজ্য প্রবাসী আত্মীয় মোঃ শহীদুল ইসলাম এবং মিছিলে উপস্থিত ছিলেন না এমন ব্যক্তিদের-ও নাম তোলা হয়েছে। এটিকে রাজনৈতিক হয়রানি ও প্রতিহিঙ্গসার নগ্ন বহিঃপ্রকাশ বলে মতামত দেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় বিএনপি নেতা-কর্মীরা। বিভিন্ন জেলা থেকে প্রথম আলোর প্রতিনিধিরা জানান, গতকাল সিলেট শহরের তালতলা এলাকার রেজিস্টারি মাঠে বিএনপিকে বিক্ষোভ সমাবেশ করতে দেয়নি পুলিশ। বেলা সাড়ে তিনটার দিকে সেখানে বিএনপির নেতা-কর্মীরা জড়ো হন। পুলিশ তাঁদের সেখান থেকে ফিরিয়ে দেয়।

ময়মনসিংহ জেলা (দক্ষিণ) বিএনপির মিছিলে পুলিশ বাধা দিয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন দলটির নেতারা। দলটি জানায়, গতকাল দুপুর ১২টার দিকে জেলা (দক্ষিণ) বিএনপির কার্যালয় থেকে মিছিল বের করার প্রস্তুতি নেওয়ার সময় পুলিশ নেতা-কর্মীদের ঘিরে ফেলে। মিছিল করতে না পেরে নেতা-কর্মীরা দলীয় কার্যালয়ের সামনে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করেন।

খাগড়াছড়িতে দলীয় কার্যালয় থেকে বিএনপি মিছিল নিয়ে মূল সড়কে যেতে চাইলে পুলিশের বাধার মুখে পড়ে। পরে সেখানেই সংক্ষিপ্ত সমাবেশ হয়। খাগড়াছড়ি সদর থানার ওসি তারেক মোহাম্মদ আবদুল হান্নানের দাবি, ‘বিএনপির অপর একটি গ্রুপ এসে ঝামেলা করতে পারে—এমন আশঙ্কায় আমরা নিরাপত্তা দিয়েছি।’

সংক্ষিপ্ত সমাবেশ শেষে বরিশাল মহানগর বিএনপি দলীয় কার্যালয় থেকে মিছিল বের করলে সেটি পুলিশের বাধার মুখে পড়ে। জামালপুর শহরের শফি মিয়ার বাজার এলাকার দলীয় কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশ করেন জেলা বিএনপির নেতা-কর্মীরা। ঢাকা মহানগর বিএনপির এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, রাজধানীর প্রায় সব কটি থানায় নেতা-কর্মীরা বিক্ষোভ মিছিল করেছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *