সংকটে নিঃশর্ত দানের অনন্য নজির

করোনাভাইরাসের মহামারিতে বিপর্যস্ত পুরো বিশ্ব। বিশ্বের কোটি কোটি মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে করোনার ভয়াবহ ছোবলে। ক্ষতিগ্রস্ত দেশের তালিকায় সবার ওপরে যুক্তরাষ্ট্র। গত বছর যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে ফুডব্যাংক, অভিবাসী অধিকার সংগঠন ও কলেজগুলো যখন আর্থিক সংকটে ধুঁকছে, তখন দাতা হিসেবে আবির্ভূত হন এক নারী।

প্রতিষ্ঠানগুলোর কার্যক্রম সচল রাখতে তাদের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে পৌঁছে দেন শত শত কোটি মার্কিন ডলার। তিনি আর কেউ নন, বিশ্বের শীর্ষ ধনী জেফ বেজোসের সাবেক স্ত্রী ম্যাকেনজি স্কট।

এসব প্রতিষ্ঠানের কাছে ম্যাকেনজি রীতিমতো বিস্ময়কর মানুষ হিসেবে আবির্ভূত হন। এর কারণ, দাতারা সাধারণত অর্থসহায়তা দেওয়ার আগে একগাদা শর্ত দেয়। কিন্তু ম্যাকেনজি তার ধারেকাছেও যাননি। তিনি দাতব্যকাজে সহায়তার জন্য ইতিমধ্যে প্রায় ৬০০ কোটি মার্কিন ডলার দান করেছেন। গত ডিসেম্বরে ম্যাকেনজি স্কটের সর্বশেষ আর্থিক সহায়তা পায় যুক্তরাষ্ট্রের ৩৮৪টি প্রতিষ্ঠান। সহায়তা পাওয়া সেই প্রতিষ্ঠানগুলোর তালিকায় রয়েছে মন্টানার ব্লাকফিট কমিউনিটি থেকে শুরু করে আরকানসাস ফুড ব্যাংক এবং ইমিগ্র্যান্ট ফ্যামিলিস ফান্ডের মতো নামকরা সব অলাভজনক প্রতিষ্ঠান।বিজ্ঞাপন

আমাজনের প্রতিষ্ঠাতা জেফ বেজোসের সঙ্গে ম্যাকেনজির বিবাহবিচ্ছেদ হয় ২০১৯ সালে। বিচ্ছেদের সময় আমাজনের শেয়ার বাবদ প্রায় ৫ হাজার ৮০০ কোটি মার্কিন ডলার পান ম্যাকেনজি। তখন সামাজিক ন্যায়বিচারের লড়াইয়ে ওই সম্পদের বেশির ভাগ ব্যয় করার ঘোষণা দেন তিনি। গত জুলাইয়ে তিনি ১৭০ কোটি মার্কিন ডলার দান করার ঘোষণা দেন। এ ছাড়া গত ডিসেম্বরে আরও ৪২০ কোটি ডলার দান করেন।

ম্যাকেনজি স্কটের এই বিশাল পরিমাণ অর্থসহায়তার বিষয়টি অন্য কারণে আলোচিত হচ্ছে। তা হলো, অর্থ দেওয়ার ক্ষেত্রে তিনি অন্য বড় দাতাদের মতো কোনো নিয়ম বেঁধে দেননি, এমনকি দাতব্যকাজে নিজের নামের স্বত্বও যুক্ত করেননি। ফলে বিশাল পরিমাণ অর্থসহায়তার জন্য নয়, ম্যাকেনজি এই ব্যতিক্রম দাতব্য কার্যক্রম বিশ্বের প্রচলিত দাতব্য কার্যক্রমকে নাড়িয়ে দিয়েছেন।

যুক্তরাষ্ট্রের অলাভজনক প্রতিষ্ঠান গিভিং ইউএসএ ফাউন্ডেশনের পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান লরা ম্যাকডোনাল্ড জনহিতকর কার্যক্রমের ওপর একাধিক গবেষণা করেছেন। তিনি বলেন, ম্যাকেনজির পদক্ষেপ ‘বিশ্বাসভিত্তিক জনহিতকর’ কার্যক্রমের একটি অংশ। এটা অনেক বড় বড় দাতার মাধ্যমে পরিচালিত আমলাতান্ত্রিক প্রক্রিয়া থেকে অনেকটাই ভিন্ন। দাতাগোষ্ঠী অর্থসহায়তা দেওয়ার আগে একগাদা নিয়ম বেঁধে দেয়। কিন্তু ম্যাকেনজি সেই পথে হাঁটেননি। তিনি নিঃশর্ত দান করেছেন সংকট পড়া প্রতিষ্ঠানগুলোকে।

ম্যাকডোনাল্ড আরও বলেন, ম্যাকেনজি স্কটের পদক্ষেপের ফলে বিশ্বাসভিত্তিক জনহিতকর দাতব্যকাজ বিশ্বে সবার শীর্ষে উঠে এসেছে। তাঁর পদক্ষেপ অন্য দাতাদের উৎসাহী করে তুলবে এবং আরও ঝুঁকি নিতে সাহায্য করবে।

সংকটে পড়া মানুষকে উদার হাতে সাহায্য করা নিয়ে একটি ব্লগ পোস্টে নিজের মতামত তুলে ধরেছেন ম্যাকেনজি স্কট। তিনি লিখেছেন, ‘এই মহামারি একটি ধ্বংসাত্মক শক্তি, যা যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকদের জীবনের ওপর আঘাত হেনেছে। নারী, বিভিন্ন বর্ণের জনগোষ্ঠী এবং দরিদ্র জনগোষ্ঠী—সবাই অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। অন্যদিকে এটা (মহামারি) কোটিপতিদের সম্পদ আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।’

দাতব্যকাজে যুক্ত কর্মীরা বলেছেন, ম্যাকেনজির পদক্ষেপ অন্য ধনকুবেরদের, এমনকি তাঁর সাবেক স্বামীকে (জেফ বেজোস) চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে, কীভাবে অসহায় মানুষকে সহায়তা করতে হয়।

সেন্টার ফর ইফেক্টিভ ফিলানথ্রোপির প্রেসিডেন্ট ফিল বুচানান বলেছেন, তাঁর (ম্যাকেনজি স্কট) দাতব্যকাজ অনুসরণ করার মতো। অন্যদেরও এই পথ অনুসরণ করা উচিত, যাতে কোটি কোটি অসহায় মানুষ সংকট কাটিয়ে উঠতে পারে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *