সপ্তাহ পেরোতে না পেরোতেই ‘‘এথিস্ট ইন বাংলাদেশ’’ এর নামে ফের মামলা।

রাশেদুল হক: সপ্তাহ পেরোতে না পেরোতেই আবারো মামলা হলো এথিস্ট ইন বাংলাদেশের ম্যাগাজিনের নামে। এই মাসেরই ১৯ তারিখে আরিফ উদ্দিন নামে একজন হেফাজতে ইসলামের কর্মি এই ম্যাগাজিনটির নামে মামলা করলে একই মাসের ২৬ তারিখ আবারো মামলা হয় এই ম্যাগাজিলের সকল লেখক এবং ব্লগারদের নামে।

এবার যে ব্যক্তি মামলা দয়ের করেন তার নাম হৃদয় কাজী, তাঁর সম্পর্কে সম্পুর্ণ তথ্য না পেলেও ধারণা করা হচ্ছে তিনিও একজন হেফাজতে ইসলামের কর্মি। মোকাম সাইবার ট্রাইব্যুনাল বাংলাদেশ ঢাকায় এই মামলাটি হয়েছে বলে প্রশাসনের তরফ থেকে মিডিয়াতে জানানো হয়েছে।

দি বিডি নিউজ এর পক্ষ থেকে এথিস্ট ইন বাংলাদেশের এডিটর আরমান আহমেদ এর সাথে কথা হলে তিনিও আমাদেরকে এই বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তিনি আরো বলেন ‘‘এটা খুবই দুঃখজনক, আমরা বাংলাদেশের নাগরিক হয়েও মানের ভাব প্রকাশ করতে পারছি না। প্রশাসন ও আমাদের কোনও সাহায্য করছে না, তারা বরং আমাদের কর্মীদেরই খুঁজছে।‘‘

আসলে নাস্তিকতা সম্পর্কে অজ্ঞ লোকজন নাস্তিকতা ও নাস্তিককে খারাপ চোখে দেখে এমনকি মৌলবাদী গোষ্ঠীটি এই দেশের অনেক ব্লগারকে হত্যাও করছে। মূলত নাস্তিকতা সম্পর্কে ধর্মান্ধদের জ্ঞান নেই বললেই চলে, আবার থাকলেও তা খুবই কম। অধিকাংশ ধার্মিকই নাস্তিকতার সংঙ্গা জানে না। 

ব্লগারদের হত্যা শুরু হয় আহম্মদ রাজিব হায়দার শোভনকে দিয়ে। ২০১৩ সালের ১৫ ফ্রেব্রুয়ারিতে তাকে মীরপুরের পলাশ নগরে তার বাসার একটু দূরে দুর্বৃত্তরা জবাই করে হত্যা করে। তারপরেও কয়েক ব্লগারের উপর হামলা চালান হয়েছে। ২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ তে একুশের বই মেলা থেকে ফেরার পথে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় অভিজিৎকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। রাজিব, অভিজিৎসহ অনেক ব্লগারকে নাস্তিক বলা হচেছ। কোন কোন ব্লগার তাদের লেখনির মাধ্যমে দাবী করেছেন কিংবা প্রমাণও করেছেন যে তারা নাস্তিক। কিন্তু নাস্তিক হলেই তাকে খুন করতে হবে — এমন বিধান তো নেই। তাছাড়া নাস্তিকতার বিরুদ্ধে বাংলাদেশে কোন আইনও নেই। নাস্তিকতা একটি মানসিক বিষয়। এটা বিশ্বাস আর অবিশ্বাসের বিষয়। 

এমতাবস্থায় আরমান আরো বলেন যে, ‘’এই ম্যাগাজিনে আমরা যতজন লেখক বা ব্লগার রয়েছি সবাই কিন্তু দেশের বাইরে নেই, আমি আমাকে নিয়ে চিন্তা করি না, আমার ভয় হচ্ছে অন্যান্য আসামিদের নিয়ে যাদের নাম বিভিন্ন ইসলামিক গ্রুপে প্রকাশ করা হচ্ছে।‘‘

এসময় তাঁর কাছে অন্যান্য আসামিদের নাম জনতে চাইলে সকলের নিরাপত্তার জন্য তিনি বিষয়টি এড়িয়ে গেলেও, হেফাজতে ইসলাম তাদের বিভিন্ন পেইজে ইতিমধ্যেই সকলের নাম প্রকাশ করে দিয়েছে।

যারা হলেন, আরমান আহমেদ (সম্পাদক, এথিস্ট ইন বাংলাদেশ), তারভির আহমেদ, কে এম মাহফুজুর রহমান, আমিনুল হক, কাজী ওয়াহিদুজ্জামান, প্রশান্ত বাড়ই, এমডি মাহাদি হাসান, আদনান সাকিব, এমডি ওমর ফারুক, মোহাম্মদ ওমর সানী, শ্রাবনী শিকদার, হায়াত হামিদ উল্লাহ রবিন, এমডি তোফায়েল হোসেন (সহ সম্পাদক), হোসনী মোবারক, সানজিদা সামির তামান্না, রুমন মিয়া, ফরজানা ইসলাম, রুমানা আফরোজ রাখি, বিপ্লব পাল, অরুনাংশ চক্ররর্তী, আসিফ আবরার টিটো, সাইফুল ইসলাম, এম ডি রাশেদ আলম, চিন্ময় দেবনাথ, জোবায়ের হোসেন, এমডি আনিছুজ্জামান, মিফতাহুর রহমান, এমডি সাব্বির, এনামুল হক, সৈয়দ সামুন আলী, অব্দুল্লাহ বাকি, এহসানুল করিম, আবু হানিফ, এমডি রেজাউল ইসলাম, কাওসার হামিদ, ডলার বিশ্বাস, এমডি আনিছুজ্জামান, হাফিজুর রহমান, সিদ্দিকুর রহমান, এমডি লায়েক মিয়া, এমডি মোনোয়ার হোসেন, নাইমুল ইসলাম, আব্দুল জলিল, এমডি খালেদ হোসেন, কাশিফ রেহান, রুবেল চৌধুরী, সুজন চন্দ্র দেব, এম এম জাকির হোসেন জ্যাকি এবং সুলতানুল আরেফিন সিয়াম।

ধারণা করা হচ্ছে এদের মধ্যে অনেকেই এখন দেশের বাইরে রয়েছে, তবে অনেকে আবার এই মূহুর্তে দেশেও আছের বলে জানিয়েছেন আরমান আহমেদ।

অন্যদিকে মামলার বাদি হৃদয় কাজীর সাথে বারবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও আমরা ব্যর্থ হয়েছি। এমনকি প্রশাসনের তরফ থেকেও এখনো তেমন কোন কি বিবৃতি দেওয়া হয়নি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *