হেসেখেলে সিরিজ জয় বাংলাদেশের

একদিকে তাঁরা নিজেরা নাচছিলেন, অন্যদিকে তাঁদের নাচতে না জানায় হোঁচট খাওয়ার মতো অবস্থা! গতকাল দুপুরে একাডেমি মাঠে ওয়েস্ট ইন্ডিজ টেস্ট স্কোয়াডের কয়েকজন সদস্য যতক্ষণ গানের তালে তালে নাচছেন, ততক্ষণ মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে তাঁদের ওয়ানডে দলের ব্যাটসম্যানদের আরেকবার নাকানি-চুবানি খাওয়া সারা!

আরেকবার তেমন না হওয়ার কোনো কারণ নেই। যথারীতি দারুণ কার্যকরী মুস্তাফিজুর রহমান ও সাকিব আল হাসান। আর যাঁর কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন উঠে যাওয়ায় দলে জায়গাই নড়বড়ে হয়ে যাচ্ছিল, সেই মেহেদী হাসান মিরাজও প্রথম ওয়ানডে সাকিবের মতোই সফল। ২৫ রানে ৪ উইকেট নিয়ে ক্যারিয়ারসেরা বোলিংই শুধু করলেন না, হলেন ম্যাচের সেরাও।

যদিও আগের ম্যাচের মতো কাল আকাশ সারা দিন মুখ গোমড়া করে থাকেনি। ঝলমলে রোদ পাওয়া উইকেটে গত ম্যাচের মতো বল টার্নও করেনি তেমন একটা। তাই বলে মুস্তাফিজ-সাকিব-মিরাজরা ক্যারিবীয় ব্যাটসম্যানদের কাছে সহজবোধ্যও হয়ে ওঠেননি। ক্যারিবীয় দলের সাধ্যসীমাও এ জন্য খুব একটা বাড়তে পারেনি। আগের ম্যাচে ১২২ রানে গুটিয়ে যাওয়া দলটি এবার পার হতে পারল না দেড় শও।

তাদের ১৪৮ রানে শেষ করে দিয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে টানা তৃতীয় ওয়ানডে সিরিজ জয় যখন কেবলই সময়ের ব্যাপার হয়ে উঠেছে, ততক্ষণে আরেকটি ‘প্রথম’ কাণ্ড ঘটানো হয়ে গেছে স্বাগতিকদের। ওয়ানডেতে এই প্রথম এক সিরিজে কোনো দলকে টানা দুই ম্যাচে দেড় শর নিচে আটকাল তারা। আটকানোর পর এবার ওড়ার পালা। অধিনায়ক তামিম ইকবালের ফিফটি এবং ব্যাট হাতে সাকিবের ছন্দে ফেরার ইঙ্গিত দেওয়া ইনিংসে ১০০ বল বাকি থাকতেই ৭ উইকেটের অনায়াস জয়। যা ওয়ানডেতে ক্যারিবীয়দের বিপক্ষে টানা সপ্তম।

অধিনায়ক হিসেবে প্রথম সিরিজ জেতার পথে ধারাবাহিক তামিমও। আগের ম্যাচে ৪৪ রান করা এই বাঁহাতি ওপেনার এবার অধিনায়ক হিসেবেও পেলেন প্রথম ফিফটির দেখা। তবে তাঁর ওপেনিং পার্টনার লিটন কুমার দাস (২৪ বলে ২২) ভালো শুরু করেও ইনিংস বড় করতে পারেননি। বাঁহাতি স্পিনার আকিল হোসেনকে জায়গায় দাঁড়িয়ে খেলতে গিয়ে তিনি এলবিডাব্লিউ হওয়ার পর উইকেটে গিয়ে তেমন সাবলীল ছিলেন না নাজমুল হোসেন শান্তও (২৬ বলে ১৭)। দু-একবার ক্যাচ তুলে দিতে দিতেও না দেওয়া এই বাঁহাতি ক্যারিবীয় অধিনায়ক জেসন মোহাম্মদের অফস্পিনে ক্যাচ দিয়েছেন শর্ট মিডউইকেটে।

অন্যদিকে নিজের ব্যাটিং দিয়ে দারুণ দায়িত্বশীলতা দেখাচ্ছিলেন তামিম। ৭৫ বলে ফিফটি করার পরই অবশ্য রেমন রেইফারের বলে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেন। এরপর মুশফিকুর রহিমকে (৯*) নিয়ে বাকি পথটা সহজেই পাড়ি দেন সাকিব। বঙ্গবন্ধু টি-টোয়েন্টি কাপে ভুগছিলেন রান খরায়। প্রথম ওয়ানডেতেও ম্যাচ শেষ করে আসতে না পারার জন্য আফসোস করেছিলেন। কাল সেই আক্ষেপও আর থাকল না। চার বাউন্ডারিতে ৫০ বলে ৪৩ রানের হার না মানা ইনিংসে জানালেন, ব্যাটের ছন্দও ধরতে শুরু করে দিয়েছেন।

বোলিংয়ে সেটি ধরেছেন আগের ম্যাচেই। এবারও প্রথম ওভারেই শিকার ধরে শুরু। এর আগে যথারীতি ভেতরে ঢোকানো বলে ক্যারিবীয় ওপেনার সুনীল আমব্রিসকে ফিরিয়ে ক্যারিবীয়দের আরেকবার চেপে ধরা শুরুও মুস্তাফিজের বোলিংয়েই। সাকিব আক্রমণে আসার আগেই শিকার ধরা শুরু করে দিয়েছিলেন মিরাজও। এই তিনে মিলে দিশাহারা ক্যারিবীয় ব্যাটিং আর পায়নি পথের দেখা।

আম্পায়ারের ভুলে পুরো ৮ ওভার বোলিং করা হয়নি মুস্তাফিজের। এর মধ্যেই তিনটি মেডেনসহ মাত্র ১৫ রান খরচায় ২ উইকেট তাঁর। ৩০ রানে সমানসংখ্যক উইকেট সাকিবেরও। সেই সঙ্গে নিজের সেরা ছাপিয়ে যাওয়া বোলিংয়ে উজ্জ্বল মিরাজের যোগফলে ছিন্নভিন্ন ক্যারিবীয় ব্যাটিং। পাশের মাঠে নেচে-গেয়ে সতীর্থদের এমন ব্যর্থতা ভুলে থাকার চেষ্টাই কি করছিলেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের টেস্ট দলের সদস্যরা?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *