‘কারও প্রভাবে নয়, কাজ করব নিজের চিন্তা, দক্ষতা ও যোগ্যতায়’
দ্বিতীয় ধাপের পৌরসভা নির্বাচনে নাটোরের গোপালপুরে বেসরকারিভাবে মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন আওয়ামী লীগের রোকসানা মোর্ত্তজা। তিনি পৌরসভা শাখায় আওয়ামী লীগের একমাত্র নারী সভাপতি। তাঁর নেতৃত্বেই পৌরসভাটিতে প্রথমবারের মতো মেয়র পদে নির্বাচিত হলেন আওয়ামী লীগের কোনো প্রার্থী। এখন নারী জনপ্রতিনিধি হিসেবে কাজ ও সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে কতটুকু স্বাধীনতা পাবেন, সে বিষয়েই কথা বলেছেন।
২০১৫ সালের নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন পেয়েও হেরে গিয়েছিলেন। গোপালপুর পৌরসভার নাগরিক সেবা ও অবকাঠামোগত উন্নয়নের ক্ষেত্র নিয়েও বাসিন্দাদের নানা অভিযোগ আছে। এবারের নির্বাচনে অংশ নেওয়ার আগে এসব নিয়ে কতটুকু ভেবেছিলেন?
আগের নির্বাচনে হেরে গেলেও থেমে যাইনি। গত পাঁচ বছরে পৌর এলাকার নয়টি ওয়ার্ডের বাসিন্দাদের বাড়ি বাড়ি ঘুরেছি। দেখেছি, এলাকার রাস্তা বেহাল। এসব নিয়ে কথা বলায় মানুষ পৌরসভার উন্নয়নে আমার আন্তরিকতার কথা উপলব্ধি করতে পেরেছেন। দায়িত্ব গ্রহণের পর প্রথমে এদিকে নজর দিতে চাই। এরপর সড়কবাতি। কারণ, পৌর এলাকার কোনো সড়কেই বাতি নেই।
নারী জনপ্রতিনিধি হলে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে পরিবার ও দলের পুরুষ সদস্যদের প্রভাবই বেশি থাকার কথা শোনা যায়। সে অনুযায়ী নির্বাচিত নারী জনপ্রতিনিধির স্বাধীনতার প্রসঙ্গ সামনে আসে।
আমি রাজনৈতিক পরিবারের সদস্য। সাত বছর ধরে গোপালপুর পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছি। এর আগে নাটোর জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সদস্য ছিলাম। আমার নিজস্ব রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি আছে। সুতরাং শুধু নারী হিসেবে নয়, গণমানুষের প্রতিনিধি হিসেবে আমি কাজ করব। এ ছাড়া আমার পারিবারিক সংস্কৃতিও অযাচিতভাবে প্রভাবিত করার মতো নয়। সুতরাং কারও প্রভাবে নয়, কাজ করব নিজের চিন্তা, দক্ষতা, যোগ্যতায়।
মেয়র হিসেবে পৌর এলাকার উন্নয়নকাজ বাস্তবায়নের ব্যাপারে কতটুকু আশাবাদী?
দেশের প্রধানমন্ত্রী একজন নারী হিসেবে বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। এরই ধারাবাহিকতায় আমি গোপালপুর পৌরসভাকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারব। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে পরিচয় থাকার কারণে পৌরসভার বিশেষ উন্নয়ন বরাদ্দের ব্যবস্থাও করতে পারব।
উন্নয়ন বরাদ্দ নিয়ে অনেক জনপ্রতিনিধির দুর্নীতি ও লুটপাটের কথা হরহামেশাই শোনা যায়।
ব্যক্তিগতভাবে আমার কোনো চাওয়া-পাওয়া নেই। আমার বাড়ি-গাড়ি সব আছে। তিন সন্তানের সবাই প্রতিষ্ঠিত। বড় মেয়ে সিলভিয়া পারভীন আওয়ামী লীগের পররাষ্ট্রবিষয়ক উপকমিটির সদস্য। একটি বেসরকারি রেডিওর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ও পরিচালক। ছেলে মোতাহারই মোসলেন মালয়েশিয়া থেকে পড়াশোনা শেষ করে ওমানে চাকরি করছে। ছোট মেয়ে নিশাত আঞ্জুম দেশের একটি বড় গ্রুপের আইনবিষয়ক কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত। সুতরাং তাদের খাওয়াপরার জন্য আমাকে চিন্তা করতে হয় না। এলাকার মানুষও জানেন, আমার কোনো লোভ নেই। বিভিন্ন দুর্যোগে-দুঃসময়ে মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছি। সুতরাং শতভাগ আত্মবিশ্বাস নিয়ে বলতে পারি, দুর্নীতির মনোভব আমাকে স্পর্শ করতে পারবে না।
নির্বাচনের জন্য আপনি ছাড়াও দলের অনেকে মনোনয়ন চেয়েছিলেন। যাঁরা পাননি, তাঁদের মনে ক্ষোভ থাকতে পারে।
আমি নির্বাচনের সময় সবার সঙ্গে কথা বলেছি। আশা করি, আমার ওপর কেউ মন খারাপ করে থাকবেন না। নেতা–কর্মীদের সবাইকে সঙ্গে নিয়ে কাজ করতে চাই। বিশ্বাস করি, সবাই সেই সহযোগিতা করবেন।
আপনাকে ধন্যবাদ।
আপনাকেও ধন্যবাদ।